সিলেট, ১৩ আগস্ট : দিনেদুপুরে অবাধে লুটপাটের কারণে বিলীনের পথে সিলেটের সাদাপাথর। সিলেটের প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর ও ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের সংরক্ষিত বাঙ্কার খুঁড়ে পাথর লুটের অভিযোগ ছিল সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজি সাহাব উদ্দিন ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। ৫ আগস্ট পরবর্তী পাথর লুটপাটের ঘটনায় দল থেকে তাকে কারণ দর্শাতেও বলা হয়েছিল। সর্বশেষ সাদা পাথরে মব মচ্ছবে’ লুটপাটের অভিযোগে বিএনপি নেতা হাজি সাহাব উদ্দিনের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। সোমবার (১১ আগস্ট) রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সিলেট জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ বিএনপির নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেট জেলাধীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের সকল দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। তার স্থলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হজি আব্দুল মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।’
হাজি সাহাব উদ্দিন পেশায় একজন পাথরব্যবসায়ী। ভোলাগঞ্জ পাথর আমদানিকারক সংগঠনেরও নেতৃত্বে রয়েছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তার নেতৃত্বে একটি চক্র সক্রিয় হয় ভোলাগঞ্জে। ৫ আগস্টে ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক পাশের রিসোর্ট ও রোপওয়ে বাঙ্কারে হামলার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, ভোলাগঞ্জ শুল্কস্টেশন এলাকার সরকারি সরকারি জমি দখল, পাথরমহালের জমি ভাড়া দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক পাহাড়ি ঢলে পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর এলাকায় লুটপাট শুরু হলে হাজি সাহাব উদ্দিনের বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে।
বিএনপি সূত্র জানায়, গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে হাজি সাহাব উদ্দিনকে আগে দেওয়া শো-কজ পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় বিএনপি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১৮ মার্চ সিলেট জেলা বিএনপি তাকে শোকজ নোটিশ দিয়েছিল। জেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর স্বাক্ষরিত নোটিশে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। তবে গ্রহণযোগ্য জবাব না দেওয়ায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল।
পদ হারানোর বিষয়ে হাজি সাহাব উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির তার অনুসারীরা এ বিষয়ে অনেকটা চুপ রয়েছে। তবে তার বিরোধীরা উল্লসিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তি ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপির এক নেতা বলেন, কেবল পদ থেকে সরিয়ে নয়, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পথে বিএনপি নমনীয় থাকলে লুটপাট চক্রের সক্রিয়তা কমবে। তা না হলে তার পাথর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রভাব বিস্তার করে রাখবে।’
উল্লেখ্য, সাদা পাথর প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একটি পর্যটনকেন্দ্র। ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথরমহালের ধলাই নদের উৎসমুখে পাঁচ একর জায়গাজুড়ে জমা হয় পাথর। ঢলের তোড়ে সেখানে সর্বশেষ ১৯৯০ সালে একবার পাথর জমা হয়েছিল। সেসব পাথরকে ‘ধলাসোনা’ বলে অভিহিত করা হয়। তবে পাহাড়ি ঢলের পর লুটপাটে সেসব পাথর নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।
২৭ বছরের মাথায় ফের পাথর জমা হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পাহারায় সংরক্ষিত হয়। ওই বছর থেকে পুরো এলাকাটি প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি। সেখানকার ঝরনা থেকে সারা বছর নদের পানি প্রবহমান থাকে। বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির পাদদেশ থেকে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে পাহাড় থেকে পাথরখণ্ড এপারে নেমে আসে। ভেসে আসা এই পাথর উত্তোলিত বা আমদানি করা পাথরের চেয়ে দামি। এটির কদরও বেশি। ব্যবহৃত হয় স্থাপত্যকাজে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan